মহালয়ার মহিষাসুরমর্দিনী লিরিক্স | সম্পূর্ণ মহালয়ার স্ক্রিপ্ট বীরেন্দ্র কৃষ্ণ ভদ্র | Birendra Krishna Bhadra Mahalaya Lyrics

মহালয়ার মহিষাসুরমর্দিনী লিরিক্স

সম্পূর্ণ মহালয়ার স্ক্রিপ্ট বীরেন্দ্র কৃষ্ণ ভদ্র 

Birendra Krishna Bhadra Mahalaya Lyrics

 

 

 

ইয়া চণ্ডী মধুকৈটভাদিদৈত্যদলনী

ইয়া মাহিষোন্মূলিনী

ইয়া ধূম্রেক্ষণচণ্ডমুণ্ডমথনি

ইয়া রক্তবীজাশনী ।

শক্তিশুম্ভনিশুম্ভদৈত্যদলনী

ইয়া সিদ্ধিদাত্রী পরা

সা দেবী নবকোটীমূর্তিসহিতা

মাং পাতু বিশ্বেশ্বরী।।

আশ্বিনের শারদপ্রাতে বেজে উঠেছে আলোকমঞ্জীর।

ধরণীর বহিরাকাশে অন্তর্হিত মেঘমালা।

প্রকৃতির অন্তরাকাশে জাগরিত জ্যোতির্ময়ী জগন্মাতার আগমনবার্তা।

আনন্দময়ী মহামায়ার পদধ্বনি

অসীম-ছন্দে বেজে উঠে রূপলোক ও রসলোকে আনে নবভাবমাধুরীর সঞ্জীবন।

তাই আনন্দিতা শ্যামলী মাতৃকার চিন্ময়ীকে মৃন্ময়ীতে আবাহন।

আজ চিচ্ছক্তিরূপিণী বিশ্বজননীর শারদশ্রীবিমণ্ডিতাপ্রতিমা মন্দিরে মন্দিরে ধ্যানবোধিতা।

 

সিংহস্থা শশিশেখরা মরকতপ্রেক্ষা চতুর্ভির্ভুজৈঃ।

শঙ্খং চক্রধনুঃশরাংশ্চ দধতী নেত্রৈস্ত্রিভিঃ শোভিতা।।

আমুক্তাঙ্গদহার কঙ্কণরণৎ কাঞ্চীক্কণন্নূপুরা।

দুর্গা দুর্গতিহারিণী ভবতু নো রত্নোল্লসৎকুণ্ডলা।

 

মহামায়া সনাতনী, শক্তিরুপা, গুণময়ী

তিনি এক, তবু প্রকাশ বিভিন্ন দেবী নারায়ণী, আবার ব্রহ্মশক্তিরুপা ব্রাহ্মণী

কখনো মহেশ্বরী রুপে প্রকাশমানা, কখনো বা নির্মলা কৌমারী রুপধারিণী

কখনো মহা-বজ্র রূপিণী ঐন্দ্রি, উগ্র শিব-দুতিনি, নৃমুন্ডমালিনী চামুণ্ডা-

তিনি আবার তবময়ি নিয়তি-

এই সর্ব প্রকাশমানা মহাশক্তি পরমা প্রকৃতির আবির্ভাব হবে

সপ্তলোক তাই আনন্দমগ্ন…

 

বাজলো তোমার আলোর বেনু

মাতল যে ভুবন

আজ প্রভাতে সে সুর শুনে খুলে দিনু মন

অন্তরে যা লুকিয়ে রাজে

অরুণ বীণায় সেই সুর বাজে

এই আনন্দ যজ্ঞে সবার মধুর আমন্ত্রণ

আজ সমীরণ আলোয় পাগল, নবীন সুরের বীণায়

আজ শরতের আকাশ বীণায় গানের মালা বিলায়

তোমায় হারা জীবন মম, তোমারি আলোয় নিরুপম

ভোরের পাখি উঠে গাহি তোমারি বন্দন।

 

হে ভগবতী মহামায়া, তুমি ত্রিগুণাত্রীকা

তুমি রজগুনে ব্রহ্মার গৃহিণী বাগদেবি, সপ্তগুনে বিষ্ণুর পত্নী লক্ষ্মী

তব গুণে শিবের বনিতা পার্বতী,

আবার ত্রিগুণাতিত কুঁড়ি-অবস্থায় তুমি অনিরবচনিয়া;

অপার মহিমময়ী পরম ব্রহ্মময়ীশী দেবী, ঋষি কাত্যায়ন এর কন্যা কাত্যায়নী-

তিনি কন্যাকুমারী আখ্যাতা দুর্গী, তিনি আদিশক্তি আগমনত সিদ্ধ-মূর্তিধরি দুর্গা

তিনি দাখ্যায়নী সতী, দেবী দুর্গা

নিজ-দেহ সম্ভুত ত্যেজ-প্রভাবে শত্রুদহনকালে অগ্নিবর্ণা, অগ্নিলোচনা

এই ঊষা লগ্নে হে মহাদেবি তোমার উদ্বোধন-

বাণীর ভক্তির রসপূর্ণ-বরণ কমল আলোক শতদল মেলে বিকশিত হোক দিকে-দিকান্তে

হে অমৃতজ্যোতি, হে মা দুর্গা, তোমার আবির্ভাবে ধরণী হোক প্রাণময়ী

জাগো… জাগো জাগো মা…

 

জাগো, তুমি জাগো, জাগো দুর্গা,

জাগো দশপ্রহরণধারিণী,

অভয়াশক্তি বলপ্রদায়িনী তুমি জাগো।

প্রণমি বরদা অজরা অতুলা

বহুবলধারিণী রিপুদলবারিণী জাগো মা।

শরণময়ী চন্ডিকা শংকরী জাগো, জাগো মা,

জাগো অসুরবিনাশিনী তুমি জাগো।।

দেবী চণ্ডিকা সচেতন চিন্ময়ী

তিনি নিত্যা, তার আদি নেই, তার প্রাকৃত মূর্তি নেই,

এই বিশ্বের প্রকাশ তার মূর্তি।

নিত্যা হয়েও অসুর-পিড়ীত দেবতা রক্ষণে তার আবির্ভাব হয়।

দেবীর শাশ্বত অভয়-বানী

“ইত্থং যদা যদা বাধা, দানবোত্থা ভবিষ্যতি।

তদা তদাবতীর্যাহং, করিষ্যাম্যরি সংক্ষয়ম”।

 

 

পূর্বকল্প অবসানের পর প্রলয়কালে সমস্ত জগত যখন কারণ-সলিলে পরিণত হল,

ভগবান বিষ্ণুর অখিল শক্তির প্রভাব সংহত করে,

সেই কারণ-সমুদ্রে রুচিত অনন্ত শয্যাপরে, যোগ-নিদ্রায় হলেন অভিভূত

বিষ্ণুর যোগ নিদ্রার অবসান কালে-

তার নাভি-পদ্ম থেকে জেগে উঠলেন ভাবি-কল্পের সৃষ্টি-বিধাতা ব্রহ্মা,

কিন্ত কর্ণমলজাত মধুকৈতব অসুরদ্দয়, ব্রহ্মার অস্তিত্ব বিনাশে উদ্ধত হতে,

পদ্মযোনি ব্রহ্মা যোগ নিদ্রায় মগ্ন সর্বশক্তিমান বিশ্ববিধাতা বিষ্ণু কে জাগরিত করবার জন্য,

জগতের স্থিতি-সংহারকারিণী বিশ্বেশ্বরী জগজ্জননী হরিনেত্র-নিবাসিনী

নিরূপমা ভগবতী কে স্তব-মন্ত্রে করলেন উদ্ভুদিত-

এই ভগবতী বিষ্ণু নিদ্রা রুপা মহারাত্রি, যোগ নিদ্রা দেবী…

 

ওগো আমার আগমনীর আলো , জ্বালো প্রদীপ জ্বালো

ওগো আমার আগমনীর আলো।

এই শরতের ঝঞ্ঝাবাতে, নিশার শেষে রুদ্রবাতে

নিভলো আমার পথের বাতি, নিভলো প্রাণের আলো

পথদেখানো আলোও জীবন জ্যোতিরূপের সুধা ঢালো ঢালো

দিক হারানো শঙ্কাপথে আসবে অরুণরথে আসবে কখন আসবে

টুটবে পথেরও নিবিড়ও আঁধারো সকলো বিষাদ-কালো

বাজাও আলোর কন্ঠবীণা,ওগো পরম ভালো করো মা ভালো |

 

 

 

ত্বং স্বাহা ত্বং স্বধা ত্বং হি বষ্‌টকারঃ স্বরাত্মিকা।

সুধা ত্বং অক্ষরে নিত্যে তৃধা মাত্রাত্মিকা স্থিতা।।

অর্ধমাত্রা স্থিতা নিত্যা ইয়া অনুচ্চারিয়াবিশেষতঃ।

ত্বমেব সন্ধ্যা সাবিত্রী ত্বং দেবী জননী পরা ।।

ত্বয়েতদ্ধার্যতে বিশ্বং ত্বয়েতৎ সৃজ্যতে জগৎ।

ত্বয়েতৎ পাল্যতে দেবী ত্বমৎস্যন্তে চ সর্বদা ।।

বিসৃষ্টৌ সৃষ্টিরূপা ত্বং স্থিতিরূপা চ পালনে।

তথা সংহৃতিরূপান্তে জগতো’স্য জগন্ময়ে ।।

মহাবিদ্যা মহামায়া মহামেধা মহাস্মৃতিঃ।

মহামোহা চ ভবতি মহাদেবী মহেশ্বরী।।

প্রকৃতিস্ত্বং চ সর্বস্ব গুণাত্রয়বিভাবিনী।

কালরাত্রির্মহারাত্রির্মোহারাত্রিশ্চ দারূণা ।।

ত্বং শ্রীস্তমীশ্বরী ত্বং হ্‌রীস্ত্বং বুদ্ধির্বোধলক্ষণা।

লজ্জা পুষ্টিস্তথা তুষ্টিস্ত্বং শান্তিঃ ক্ষান্তিরেব চ ।।

খড়্গিনী শূলিনী ঘোড়া গদিনী চক্রিনী তথা।

শঙ্খিনী চাপিনী বাণ ভূশূন্ডী পরিঘআয়ূধা ।।

সৌম্যা সৌম্যতরাহ্‌শেষ, সৌম্যেভ্যস ত্বতিসুন্দরী।

পরাপরাণাং পরমা ত্বমেব পরমেশ্বরী ।।

 

 

 

তব অচিন্ত্য রূপ-চরিত-মহিমা,

নব শোভা, নব ধ্যান রূপায়িত প্রতিমা,

বিকশিল জ্যোতি প্রীতি মঙ্গল বরণে।

তুমি সাধন ধন ব্রহ্ম বোধন সাধনে।।

তব প্রেমনয়ন ভাতি নিখিল তারণী

কনককান্তি ঝরিছে কান্ত বদনে।।

হে মহালক্ষ্মী জননী গৌরী শুভদা,

জয় সংগীত ধ্বনিছে তোমারই ভুবনে।।

 

তখন প্রলয় অন্ধকার রূপিণী তামসী দেবী এই স্তবে প্রবুদ্ধা হয়ে বিষ্ণুর অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ থেকে বাহির হল বিষ্ণুর যোগ নিদ্রা ভঙ্গ হল, বিষ্ণু সুদর্শন-চক্র চালনে মধুকইতবের মস্তক ছিন্ন করলেন। পুনরায় ব্রহ্মা ধ্যানমগ্ন হলেন।

 

এদিকে কালান্তরে দুর্ধর্ষ দৈত্যরাজ মহিষাসুরের পরাক্রমে দেবতারা স্বর্গের অধিকার হারালেন। অসুরপতির অত্যাচারে দেবলোক বিষাদব্যথায় পরিগ্রহণ হয়ে গেল।

দেবগণ ব্রহ্মার শরণাপন্ন হলেন। ব্রহ্মার বরেই মহিষাসুর অপরাজেয়- তাঁর দ্বারা দৈত্যরাজের ক্ষয় সম্ভবপর নয় জেনে তাঁরই নির্দেশে অমরবৃন্দ কমলযোনি বিধাতাকে মুখপাত্র করে বৈকুণ্ঠে গিয়ে দেখলেন হরিহর আলাপনে রত। ব্রহ্মা স্বমুখে নিবেদন করলেন মহিষাসুরের দুর্বিষহ অত্যাচারের কাহিনী। স্বর্গভ্রষ্ট দেবতাকুলের এই বার্তা শুনলেন তাঁরা। শান্ত যোগীবর মহাদেবের সুগৌর মুখমণ্ডল ক্রোধে রক্তজবার মত রাঙা বরণ ধারণ করলে আর শঙ্খচক্রগদাপদ্মধারী নারায়ণের আনন ভ্রুকূটিকুটিল হয়ে উঠল।তখন মহাশক্তির আহ্বানে গগনে গগনে নিনাদিত হল মহাশঙ্খ।বিশ্বযোনি বিষ্ণু রুদ্রের বদন থেকে তেজোরাশি বিচ্ছুরিত হল; ব্রহ্মা ও দেবগণের আনন থেকে তেজ নির্গত হল।

এই পর্বতপ্রমাণ জ্যোতিপুঞ্জ প্রজ্জ্বলিত হুতাশনের ন্যায় দেদীপ্যমান কিরণে দিঙ্‌মণ্ডল পূর্ণ করে দিলে।

ওই তেজরশ্মি একত্র হয়ে পরমা রূপবতী দিব্যশ্রী মূর্তি উৎপন্ন হল।

তিনি জগন্মাতৃকা মহামায়া। এই আদ্যাদেবী ঋক্‌মন্ত্রে ঘোষণা করলেন আত্মপরিচয়-

 

অহং রুদ্রেভির্বসুভিশ্চরাম্যহম্‌ আদিত্যৈরুত বিশ্বদেবৈঃ ।

অহং মিত্রাবরুণোভা বিভর্ম্যহম্‌ ইন্দ্রাগ্নী অহমশ্বিনোভা ।।

অহং সোমমাহনসং বিভর্ম্যহং ত্বষ্টারমুত পূষণং ভগম্‌।

অহং দধামি দ্রবিণং হবিষ্মতে সুপ্রাব্যে যজমানায় সুন্বতে ।।

অহং রাষ্ট্রী সংগমনী বসূনাং চিকিতুষী প্রথমা যজ্ঞিয়ানাম্‌ ।

তাং মা দেবা ব্যদধুঃ পুরুত্রা ভূরিস্থাত্রাং ভূর্যাবেশয়ন্তীম্‌ ।।

ময়া সো অন্নমত্তি যো বিপশ্যতি যঃ প্রাণিতি য ঈং শৃণোত্যুক্তম্‌ ।

অমন্তবো মাং ত উপক্ষিয়ন্তি শ্রুধি শ্রুত শ্রদ্ধিবং তে বদামি ।।

অহমেব স্বয়মিদং বদামি জুষ্টং দেবেভিরুত মানুষেভিঃ ।

যং যং কাময়ে তং তমুগ্রং কৃণোমি তং ব্রহ্মাণং তমৃষি তং সুমেধাম্‌ ।।

অহং রুদ্রায় ধনুরাতনোমি ব্রহ্মদ্বিষে শরবে হন্তবা উ ।

অহং জনায় সমদং কৃণোম্যহং দ্যাবাপৃথিবী আবিবেশ ।।

অহং সুবে পিতরমস্য মূর্ধন্‌ মম যোনিরপ্‌স্বন্তঃ সমুদ্রে ।

ততো বিতিষ্ঠে ভুবনানু বিশ্বো তামূং দ্যাং বর্ষ্মণোপস্পৃশামি ।।

অহমেব বাত ইব প্রবাম্যারভমাণা ভুবনানি বিশ্বা ।

পরো দিবা পর এনা পৃথিব্যৈতাবতী মহিনা সংবভূব ।।

 

অপূর্ব স্ত্রীমূর্তি মহাশক্তি দেবগণের অংশসম্ভূতা; দেবগণের সমষ্টিভূত তেজোপিণ্ড এক বরবর্ণিনী শক্তিস্বরূপিণী দেবীমূর্তি ধারণ করলেন। এই দেবীর আনন শ্বেতবর্ণ, নেত্র কৃষ্ণবর্ণ, অধরপল্লব আরক্তিম ও করতলদ্বয় তাম্রাভ।তিনি কখনো বা সহস্রভুজা, কখনো বা অষ্টাদশভুজারূপে প্রকাশিত হতে লাগলেন।এই ভীমকান্তরূপিণী দেবী ত্রিগুণা মহালক্ষ্মী, তিনিই আদ্যামহাশক্তি।মহাদেবীর মহামহিমময় আবির্ভাবে বরণগীত ধ্বনিত হয়ে উঠল।

 

 

অখিল বিমানে তব জয়গানে যে সামরব,

বাজে সেই সুরে সোনার নুপূরে নিত্যে নব।

হে আলোর আলো, তিমির মিলাল,

তব জ্যোতি সুধা চেতনা বিলাল;

রাগিণী যে ছিঁড়ে গাহিল মধুরে সে বৈভব।

 

 

জয়ন্তী মঙ্গলা কালী ভদ্রকালী কপালিনী ।

দুর্গা শিবা ক্ষমা ধাত্রী স্বাহা স্বধা নমোঽস্তু তে ।।

 

 

দেবীর আবির্ভাবের এই শুভ বার্তা প্রকাশিত হল।

সকল দেবদেবী মহাদেবীকে বরণ করলেন গীতিমাল্যে, সেবা করলেন রাগচন্দনে।

জগন্মাতা চণ্ডিকা উপাসকের ধনদাত্রী, ব্রহ্মচৈতন্যস্বরূপা সর্বোত্তম মহিমা।

মহাদেবী অন্তর্যামীরূপে ব্যক্ত হয়ে আছেন দ্যুলোক-ভূলোক।

ভুবনমোহিনী সর্ববিরাজমানা জগদীশ্বরী, আপন মহিমায় দ্যাবা পৃথিবী ও সৃষ্টির মধ্যে পরিব্যক্ত হয়ে অবস্থান করেন পরমচৈতন্যরূপা।

মানবের কল্যাণে সর্বমঙ্গলা হোন উদ্বুদ্ধা।

 

 

শুভ্র শঙ্খরবে সারা নিখিল ধ্বনিত।

আকাশতলে অনিলে-জলে, দিকে-দিগঞ্চলে,

সকল লোকে, পুরে, বনে-বনান্তরে

নৃত্যগীতছন্দে নন্দিত।

শরৎপ্রকৃতি উল্লাসি তব গানে

চিরসুন্দর চিরসুন্দর চিতসুন্দর বন্দনদানে

ত্রিলোকে যোগে সুরন্ময়ী আনন্দে।

মহাশক্তিরূপা মঞ্জুলশোভা জাগে আনন্দে

মা যে কল্যাণী সদা রাজে,

সদা সুখদা, সদা বরদা, সদা জয়দা, ক্ষেমঙ্করী, সুধা, হ্রদে।

অসুরদশন দশপ্রহরণভুজা রাগে

রণিত বীণাবেণু, মধু ললিত শমিত তানে

শুভ আরতি ঝঙ্কৃত ভুবনে নবজ্যোতি রাগে,

জ্যোতি অলঙ্কারে তানে তানে ওঠে গীতি

সুধারসঘন শান্তি ঝন ঝন জয়গানে।

দেবী নিত্যা, তথাপি দেবগণের কার্যসিদ্ধিহেতু সর্বদেবশরীরজ তেজঃপুঞ্জ থেকে তখন প্রকাশিত হয়েছেন বলে তাঁর এই অভিনব প্রকাশ বা আবির্ভাবই মহিষমর্দিনীর উৎপত্তিরূপে খ্যাত হল।দেবী সজ্জিতা হলেন অপূর্ব রণচণ্ডী মূর্তিতে।হিমাচল দিলেন সিংহবাহন, বিষ্ণু দিলেন চক্র, পিনাকপাণি শঙ্কর দিলেন শূল, যম দিলেন তাঁর দণ্ড,কালদেব সুতীক্ষ্ণ খড়্গ, চন্দ্র অষ্টচন্দ্র শোভা চর্ম দিলেন, ধনুর্বাণ দিলেন সূর্য, বিশ্বকর্মা অভেদবর্ম, ব্রহ্মা দিলেন অক্ষমালা-কমণ্ডলু, কুবের রত্নহার। সকল দেবতা মহাদেবীকে নানা অলঙ্কারে অলঙ্কৃত ও বিবিধপ্রহরণে সুসজ্জিত করে অসুরবিজয় যাত্রায় যেতে প্রার্থনা করলেন। রণদুন্দুভিধ্বনিতে বিশ্বসংসার নিনাদিত হতে লাগল।যাত্রার পূর্বে সুর-নরলোকবাসী সকলেই দশপ্রহরণধারিণী দশভুজা মহাশক্তিকে ধ্যানমন্ত্রে করলেন অভিবন্দনা।

 

 

জটাজূটসমাযুক্তামর্ধেন্দুকৃতশেখরাম্‌ ।

লোচনত্রয়সংযুক্তাং পূর্ণেন্দুসদৃশাননাম্‌।।

অতসীপুষ্পবর্ণাভাং সুপ্রতিষ্ঠাং সুলোচনাম্‌ ।

নবযৌবনসম্পন্নাং সর্বাভরণভূষিতাম্‌ ।।

সুচারুদশনাং তদ্বৎ পীনোন্নত-পয়োধরাম্‌ ।

ত্রিভঙ্গস্থানসংস্থানাং মহিষাসুরমর্দিনীম্‌ ।।

মৃণালায়ত-সংস্পর্শ-দশবাহুসমন্বিতাম্‌ ।

ত্রিশূলং দক্ষিণে ধ্যেয়ং খড়্গং চক্রং ক্রমাদধঃ ।।

তীক্ষ্ণবাণং তথা শক্তিং দক্ষিণেষু বিচিন্তয়েৎ ।

খেটকং পূর্ণচাপঞ্চ পাশমঙ্কুশমেব চ ।

ঘন্টাং বা পরশুং বাপি বামতঃ সন্নিবেশয়েৎ ।।

অধস্তানন্মহিষং তদ্বদ্বিশিরষ্কং প্রদর্শয়েৎ।।

রক্তারক্তীকৃতাঙ্গঞ্চ রক্তবিস্ফুরিতেক্ষণম্‌ ।

বেষ্টিতং নাগপাশেন ভ্রূকুটি-ভীষণাননম্‌ ।।

কিঞ্চিদুর্দ্ধং তথা বামমঙ্গুষ্ঠং মহিষোপরি ।

দেব্যাস্তু দক্ষিণং পাদং সমং সিংহোপরি স্থিতম্‌ ।।

স্তূয়মানঞ্চ তদ্রূপমমরৈঃ সন্নিবেশয়েৎ ।

প্রচণ্ডবদনাং দেবীং সর্বদাং বলপ্রদাং ।।

উগ্রচণ্ডা প্রচণ্ডা চ চণ্ডোগ্রা চণ্ডনায়িকা ।

চণ্ডা চণ্ডবতী চৈব চণ্ডরূপাতি চণ্ডিকা ।।

আভিঃ শক্তিভিষ্টাভিঃ সততং পরিবেষ্টিতাম্‌ ।

চিন্তয়েজ্জগতাং ধাত্রীং ধর্মকামার্থমোক্ষদাং ।।

জয়ন্তী মঙ্গলা কালী ভদ্রকালী কপালিনী ।

দুর্গা শিবা ক্ষমা ধাত্রী স্বাহা স্বধা নমোঽস্তু তে ।।

দেবী অষ্টাদশভুজা পরিগ্রহণ করে শঙ্খে দিলেন ফুৎকার।

দেবীর রণ-আহ্বানশব্দ অনুশরণ করে সসৈন্যে ধাবমান হল মহাবলশালী মহিষাসুর।

অসুররাজ লক্ষ্য করলেন মহালক্ষ্মীদেবীর তেজঃপ্রভায় ত্রিলোক জ্যতির্ময়, তাঁর মুকুট গগন চুম্বন করছে, পদভারে পৃথ্বী আনতা আর ধনুকটঙ্কারে রসাতল প্রকম্পিত।

দেবসেনাপতি মহাশক্তির জয়মন্ত্রের গুণে দেবীকে দান করলেন মহাপ্রীতি।

 

নমো চণ্ডী, নমো চণ্ডী, নমো চণ্ডী।

জাগো রক্তবীজনিকৃন্তিনী, জাগো মহিষাসুরবিমর্দিনী,

উঠে শঙ্খমন্দ্রে অভ্রবক্ষ শঙ্কাশননে চণ্ডী।

তব খড়্গশক্তি কৃতকৃতান্ত শত্রু শাতন তন্দ্রী

নত সিংহবাহিনী ঘনহুংকারে ইন্দ্রাদি চমূতন্দ্রী।

তুমি রণকতন্ত্র টঙ্কারে হানো খরকলম্বজলে

সব রথ তুরঙ্গ ছিন্ন ছিন্ন সুতীক্ষ্ণ করবালে।

নাচো ধূম্রনেত্র দনুজমুণ্ড চক্রপাতনে খণ্ডী,

তব তাতাথৈ তাতাথৈ প্রলয় নৃত্য ধ্বংসে বাঁধন গণ্ডী।

 

 

দেবীর সঙ্গে মহিষাসুরের প্রবল সংগ্রাম আরম্ভ হল।

দেবীর অস্ত্রপ্রহারে দৈত্যসেনা ছিন্নভিন্ন হতে লাগল।

মহিষাসুর ক্ষণে ক্ষণে রূপ পরিবর্তন করে নানা কৌশল বিস্তার করলে।

মহিষ থেকে হস্তীরূপ ধারণ করলে; আবার সিংহরূপী দৈত্যের রণোন্মত্ততা দেবী প্রশমিত করলেন।

পুনরায় নয়নবিমোহন পুরুষবেশে আত্মপ্রকাশ করলে ওই ঐন্দ্রজালিক।

দেবীর রূঢ় প্রত্যাখ্যান পেয়ে আবার মহিষমূর্তি গ্রহণ করলে।

রণবাদ্য দিকে দিগন্তরে নিনাদিত, চতুরঙ্গ নিয়ে অসুরেশ্বর দেবীকে পরাজিত করবার মানসে উল্লসিত।

দেবীর বাহন সিংহরাজ দাবাগ্নির মত সমস্ত রণক্ষেত্রে শত্রুনিধনে দুর্নিবার হয়ে উঠল।

নানাপ্রহরণধারিণী দেবী দুর্গা মধু পান করতে করতে মহিষরূপকে সদম্ভে বললেন,

“গর্জ গর্জ ক্ষণং মূঢ় মধু যাবৎ পিবাম্যহম্‌

ময়া ত্বয়ি হতেঽত্রৈব গর্জিষ্যন্ত্যাশু দেবতাঃ।।”

 

 

দেবতাগণ সানন্দে দেখলেন, দুর্গা মহিষাসুরকে শূলে বিদ্ধ করেছেন আর খড়্গনিপাতে দৈত্যের মস্তক ভূলুণ্ঠিত।

তখন অসুরনাশিনী দেবী মহালক্ষ্মীর আরাধনাগীতিসুষমা দ্যাব্যা পৃথিবীতে পরিব্যাপ্ত হল।

 

মাগো, তব বীণে সঙ্গীত প্রেম ললিত,

নিখিল প্রাণের বীণা তারে তারে রণিত।

সকল রোদন সেই সুরে গেল মরিয়া –

কালি কালি যত জমেছিল দুখযামিনী

ঊষার মূরতি ধরিয়া বাহির রাগিনী –

জীবন ছিল আলোকসুধায় ধরি তাই।

 

 

হে দেবী চণ্ডিকা, তোমার পুণ্য স্তবগাথা ঐশ্বর্য, সৌভাগ্য, আরোগ্য, শত্রুহানি ও পরম মোক্ষলাভের উপায়। তোমার স্তবমন্ত্রে মানবলোকে জাগরিত হোক ভূমানন্দের অপূর্ব প্রেরণা।

 

দেবি প্রপন্নার্তিহরে প্রসীদ, প্রসীদ মাতর্জগতোঽখিলস্য ।

প্রসীদ বিশ্বেশ্বরী পাহি বিশ্বং ত্বমীশ্বরী দেবি চরাচরস্য ।।

আধারভূতা জগতস্ত্বমেকা মহীস্বরূপেণ যতঃ স্থিতাসি ।

অপাং স্বরূপস্থিতয়া ত্বয়ৈতৎ আপ্যায্যতে কৃৎস্নমলঙ্ঘ্যবীর্যে ।।

ত্বং বৈষ্ণবীশক্তিরনন্তবীর্যা বিশ্বস্য বীজং পরমাসি মায়া ।

সম্মোহিতং দেবি সমস্তমেতৎ ত্বং বৈ প্রসন্না ভুবি মুক্তিহেতুঃ ।।

বিদ্যাঃ সমস্তাস্তব দেবি ভেদাঃ স্ত্রিয়ঃ সমস্তাঃ সকলা জগৎসু।

ত্বয়ৈকয়া পূরিতমম্‌বয়ৈতৎ কা তে স্তুতিঃ স্তব্যপরাপরক্তিঃ ।।

সর্বভূতা ইয়দা দেবী স্বর্গমুক্তিপ্রদায়িনী ত্বং স্তুতা স্তুত্যে কা বা ভবন্তু পরমোক্তয়ঃ ।

সর্বস্য বুদ্ধিরূপেণ জনস্য হৃদি সংস্থিতে ।।

স্বর্গাপবর্গদে দেবি নারায়ণি নমোঽস্তু তে কলাকাষ্ঠাদিরূপেণ পরিণাম্প্রদায়িনি ।

বিশ্বস্যোপরতৌ শক্তে নারায়ণি নমোঽস্তু তে সর্বমঙ্গলমঙ্গল্যে শিবে সর্বার্থসাধিকে ।।

শরণ্যে ত্র্যম্বকে গৌরি নারায়ণি নমোঽস্তু তে সৃষ্টিস্থিতিবিনাশানাং শক্তিভূতে সনাতনী ।

গুণাশ্রয়ে গুণময়ে নারায়ণি নমোঽস্তু তে ।।

শরণাগতদীনির্তপরিত্রাণপরায়ণে ।

সর্বস্যার্তিহরে দেবি নারায়ণি নমোঽস্তু তে ।।

হংসযুক্তবিমানস্থে ব্রহ্মাণিরূপধারিণী ।

কৌশাম্ভঃক্ষরিকে দেবি নারায়ণি নমোঽস্তু তে ।।

ত্রিশূলচন্দ্রাহিধরে মহাবৃষভবাহিনি ।

মাহেশ্বরীস্বরূপেণ নারায়ণি নমোঽস্তু তে ।।

ময়ূরকুক্কুটবৃতে মহাশক্তিধরেঽনঘে ।

কৌমারীরূপসংস্থানে নারায়ণি নমোঽস্তু তে ।।

শঙ্খচক্রগদাশার্ঙ্গগৃহীতপরমায়ুধে ।

প্রসীদ বৈষ্ণবীরূপে নারায়ণি নমোঽস্তু তে ।।

গৃহীতোগ্রমহাচক্রে দংষ্ট্রোদ্ধৃতবসুন্ধরে ।

বরাহরূপিণি শিবে নারায়ণি নমোঽস্তু তে ।।

নৃসিংহরূপেণ হন্তুং দৈত্যান্‌ কৃতোদ্যমে ।

ত্রৈলোক্যত্রাণসহিতে নারায়ণি নমোঽস্তু তে ।।

কিরীটিনি মহাবজ্রে সহস্রনয়নোজ্জ্বলে ।

বৃত্রপ্রাণহরে চৈন্দ্রী নারায়ণি নমোঽস্তু তে ।।

শিবদূতীস্বরূপেণ হতদৈত্যমহাবলে ।

ঘোররূপে মহারাবে নারায়ণি নমোঽস্তু তে ।।

দংষ্ট্রাকরালবদনে শিরোমালাবিভূষণে ।

চামুণ্ডে মুণ্ডমথনে নারায়ণি নমোঽস্তু তে ।।

লক্ষ্মি লজ্জে মহাবিদ্যে শ্রদ্ধে পুষ্টি স্বধে ধ্রুবে ।

মহারাত্রি মহামায়ে নারায়ণি নমোঽস্তু তে ।।

মেধে সরস্বতি বরে ভূতি বাভ্রবি তামসি ।

নিয়তে ত্বং প্রসীদেশে নারায়ণি নমোঽস্তু তে ।।

সর্বস্বরূপে সর্বেশে সর্বশক্তিসমন্বিতে ।

ভয়েভ্যস্ত্রাহি নো দেবি দুর্গে দেবি নমোঽস্তু তে ।।

এতৎ তে বদনং সৌম্যং লোচনত্রয়ভূষিতম্‌ ।

পাতু নঃ সর্বভূতেভ্যঃ কাত্যায়নি নমোঽস্তু তে ।।

জ্বালাকরালমত্যুগ্রমশেষাসুরসূদনম্‌ ।

ত্রিশূলং পাতু নো ভীতেভদ্রকালি নমোঽস্তু তে ।।

হিনস্তি দৈত্যতেজাংসি স্বনেনাপূর্য যা জগৎ ।

সা ঘন্টা পাতু নো দেবি পাপেভ্যোঽনঃ সুতানিব ।।

অসুরাসৃগ্‌বসাপঙ্কচর্চিতস্তে করোজ্জ্বলঃ ।

শুভায় খড়্গ ভবতু চণ্ডিকে ত্বাং নতা বয়ম্‌ ।।

রোগানশেষানপহংসি তুষ্টা রুষ্টা তু কামান্‌ সকলানভীষ্টান ।

ত্বামাশ্রিতানাং ন বিপন্নরাণাং ত্বামাশ্রিতা হ্যাশ্রয়তাং প্রয়ান্তি ।।

এতং কৃতং যৎ কদনং ত্বয়াদ্য ধর্মদ্বিষাং দেবি মহাসুরাণাম্‌ ।

রূপৈরনেকৈর্বহুধাত্মমূর্তিং কৃত্বাম্‌বিকে তৎ প্রকরোতি কান্যা ।।

বিদ্যাসু শাস্ত্রেষু বিবেকদীপে ষ্বাদ্যেষু বাক্যেষু চ কা ত্বদন্যা ।

মমত্বগর্তেঽতিমহান্ধকারে বিভ্রাময়ত্যেতদতীব বিশ্বম্‌ ।।

রক্ষাংসি যত্রোগবিষাশ্চ নাগা যত্রারয়ো দস্যুবলানি যত্র ।

দাবানলো যত্র তথাব্‌ধিমধ্যে তত্র স্থিতা ত্বং পরিপাসি বিশ্বম্‌ ।।

বিশ্বেশ্বরি ত্বং পরিপাসি বিশ্বম্‌ বিস্বাত্মিকা ধারয়সীতি বিশ্বম্‌ ।

বিশ্বেশবন্দ্যা ভবতী ভবন্তি বিশ্বাশ্রয়া যে ত্বয়ি ভক্তিনম্রাঃ ।।

দেবি প্রসীদ পরিপালয় নোঽরিভীতেঃ নিত্যং যথাসুরবধাদধুনৈব সদ্যঃ ।

পাপানি সর্বজগতাঞ্চ শমং নায়াশু উৎপাতপাকজনিতাংশ্চ মহোপসর্গান্‌ ।।

প্রণতানাং প্রসীদ ত্বং দেবি বিশ্বার্তিহারিণি ।

ত্রৈলোক্যবাসিনামীড্যে লোকানাং বরদা ভবঃ ।।

বিমানে বিমানে আলোকের গানে জাগিল ধ্বনি –

তব বীণা তারে সে সুর বিহারে কি জাগরণে।

অরুণ রবি যে নিখিল রাঙালো,

পূর্ব আঁচলে তন্দ্রা ভাঙালো,

রাঙা হিল্লোলে ধরণী যে দোলে নূপুররণি।

 

 

দেবীর অক্ষয় কৃপাকণা পেয়ে সপ্তলোক আনন্দিত।

প্রথম কল্পে দেবী কাত্যায়ান-নন্দিনী কাত্যায়নী, অষ্টাদশভুজা উগ্রচণ্ডারূপে মহিষমর্দন করেন;

দ্বিতীয় ষোড়শভুজা ভদ্রকালীর হতে মর্দিত হয় মহিষ;

আর তৃতীয়ৈঃ বর্তমানকল্পে দশভুজা দুর্গারূপে মহাদেবী সুসজ্জিতা মহিষমর্দিনী।

 

অখিল মানবকণ্ঠে ধ্বনিত পুষ্পাঞ্জলি স্তোত্রবন্দনা-

জয় জয় জপ্য জয়ে জয় শব্দ পরস্তুতি তৎপর বিশ্বনুতে

ঝণঝণ ঝিংঝিমি ঝিংকৃতনূপুর শিঞ্জিতমোহিত ভূতপতে ।

নটিত নটার্ধ নটী নট নায়ক নাটিতনাট্য সুগানরতে

জয় জয় হে মহিষাসুরমর্দিনি রম্যকপর্দিনি শৈলসুতে ।।

অয়ি সুমনঃ সুমনঃ সুমনঃ সুমনঃ সুমনোহর কান্তিযুতে

শ্রিতরজনী রজনী রজনী রজনী রজনীকর বক্‌ত্রবৃতে ।

সুনয়ন বিভ্রমর ভ্রমর ভ্রমর ভ্রমর ভ্রমরাধিপতে

জয় জয় হে মহিষাসুরমর্দিনি রম্যকপর্দিনি শৈলসুতে ।।

কনকলসৎকল সিন্ধুজলৈরনুষিঞ্চতি তে গুণরঙ্গভুবং

ভজতি স কিং ন শচীকুচকুম্ভ তটীপরিরম্ভ সুখানুভবম্‌ ।

তব চরণং শরণং করবাণি নতামরবাণি নিবাসি শিবম্‌

জয় জয় হে মহিষাসুরমর্দিনি রম্যকপর্দিনি শৈলসুতে ।।

 

 

নমো দেব্যৈ মহাদেব্যৈ শিবায়ৈ সততং নমঃ ।

নমঃ প্রকৃতৈ ভদ্রায়ৈ নিয়তাঃ প্রণতাঃ স্ম তাম্‌ ।।

রৌদ্রায়ৈ নমো নিত্যায়ৈ গৌর্যৈ ধাত্র্যৈ নমো নমঃ ।

জ্যোৎস্নায়ৈ চেন্দুরূপিণ্যৈ সুখায়ৈ সততং নমঃ ।।

কল্যাণ্যৈ প্রণতা বৃদ্ধ্যৈ সিদ্ধ্যৈ কুর্মো নমো নমঃ ।

নৈঋত্যৈ ভুভৃতাং লক্ষ্ম্যৈ শর্বাণ্যৈ তে নমো নমঃ ।।

দুর্গায়ৈ দুর্গপারায়ৈ সারায়ৈ সর্বকারিণ্যৈ ।

খ্যাত্যৈ তথৈব কৃষ্ণায়ৈ ধূম্রায়ৈ সততং নমঃ ।।

অতিসৌম্যাতিরৌদ্রায়ৈ নতাস্তস্যৈ নমো নমঃ ।

নমো জগৎপ্রতিষ্ঠায়ৈ দেব্যৈ কৃত্যৈ নমো নমঃ ।।

যা দেবী সর্বভূতেষু বিষ্ণুমায়েতি শব্দিতা ।

নমস্তস্যৈ নমস্তস্যৈ নমস্তস্যৈ নমো নমঃ ।।

যা দেবী সর্বভূতেষু চেতনেত্যভিধীয়তে ।

নমস্তস্যৈ নমস্তস্যৈ নমস্তস্যৈ নমো নমঃ ।।

যা দেবী সর্বভূতেষু বুদ্ধিরূপেণ সংস্থিতা ।

নমস্তস্যৈ নমস্তস্যৈ নমস্তস্যৈ নমো নমঃ ।।

যা দেবী সর্বভূতেষু নিদ্রারূপেণ সংস্থিতা ।

নমস্তস্যৈ নমস্তস্যৈ নমস্তস্যৈ নমো নমঃ ।।

যা দেবী সর্বভূতেষু ক্ষুধারূপেণ সংস্থিতা ।

নমস্তস্যৈ নমস্তস্যৈ নমস্তস্যৈ নমো নমঃ ।।

যা দেবী সর্বভূতেষু ছায়ারূপেণ সংস্থিতা ।

নমস্তস্যৈ নমস্তস্যৈ নমস্তস্যৈ নমো নমঃ ।।

যা দেবী সর্বভূতেষু শক্তিরূপেণ সংস্থিতা ।

নমস্তস্যৈ নমস্তস্যৈ নমস্তস্যৈ নমো নমঃ ।।

যা দেবী সর্বভূতেষু তৃষ্ণারূপেণ সংস্থিতা ।

নমস্তস্যৈ নমস্তস্যৈ নমস্তস্যৈ নমো নমঃ ।।

যা দেবী সর্বভূতেষু ক্ষান্তিরূপেণ সংস্থিতা ।

নমস্তস্যৈ নমস্তস্যৈ নমস্তস্যৈ নমো নমঃ ।।

যা দেবী সর্বভূতেষু জাতিরূপেণ সংস্থিতা ।

নমস্তস্যৈ নমস্তস্যৈ নমস্তস্যৈ নমো নমঃ ।।

যা দেবী সর্বভূতেষু লজ্জারূপেণ সংস্থিতা ।

নমস্তস্যৈ নমস্তস্যৈ নমস্তস্যৈ নমো নমঃ ।।

যা দেবী সর্বভূতেষু শান্তিরূপেণ সংস্থিতা ।

নমস্তস্যৈ নমস্তস্যৈ নমস্তস্যৈ নমো নমঃ ।।

যা দেবী সর্বভূতেষু শ্রদ্ধারূপেণ সংস্থিতা ।

নমস্তস্যৈ নমস্তস্যৈ নমস্তস্যৈ নমো নমঃ ।।

যা দেবী সর্বভূতেষু কান্তিরূপেণ সংস্থিতা ।

নমস্তস্যৈ নমস্তস্যৈ নমস্তস্যৈ নমো নমঃ ।।

যা দেবী সর্বভূতেষু লক্ষ্মীরূপেণ সংস্থিতা ।

নমস্তস্যৈ নমস্তস্যৈ নমস্তস্যৈ নমো নমঃ ।।

যা দেবী সর্বভূতেষু বৃত্তিরূপেণ সংস্থিতা ।

নমস্তস্যৈ নমস্তস্যৈ নমস্তস্যৈ নমো নমঃ ।।

যা দেবী সর্বভূতেষু স্মৃতিরূপেণ সংস্থিতা ।

নমস্তস্যৈ নমস্তস্যৈ নমস্তস্যৈ নমো নমঃ ।।

যা দেবী সর্বভূতেষু দয়ারূপেণ সংস্থিতা ।

নমস্তস্যৈ নমস্তস্যৈ নমস্তস্যৈ নমো নমঃ ।।

যা দেবী সর্বভূতেষু তুষ্টিরূপেণ সংস্থিতা ।

নমস্তস্যৈ নমস্তস্যৈ নমস্তস্যৈ নমো নমঃ ।।

যা দেবী সর্বভূতেষু মাতৃরূপেণ সংস্থিতা ।

নমস্তস্যৈ নমস্তস্যৈ নমস্তস্যৈ নমো নমঃ ।।

যা দেবী সর্বভূতেষু ভ্রান্তিরূপেণ সংস্থিতা ।

নমস্তস্যৈ নমস্তস্যৈ নমস্তস্যৈ নমো নমঃ ।।

ইন্দ্রিয়াণামধিষ্ঠাত্রী ভূতনাঞ্চাখিলেষু যা।

ভূতেষু সততং তস্যৈ ব্যাপ্তিদেব্যৈ নমো নমঃ ।।

চিতিরূপেণ যা কৃৎস্নমেতদ্‌ ব্যাপ্যা স্থিতা জগৎ ।

নমস্তস্যৈ নমস্তস্যৈ নমস্তস্যৈ নমো নমঃ ।।

 

হে চিন্ময়ী, হিমগিরি থেকে এলে,

এলে তারে রেখে নির্মল প্রাতে।

বসুন্ধরা যে সুবিমল সাজে অঞ্জলি হাতে।

নবনীলিমায় বাজে মহাভেরী,

দিকে দিকে তব মাধুরি যে হেরি,

সুললিত তালে তালে সুধা আনে আলোকেরি সাথে।

সাজাব যে ডালা, গাঁথিব যে মালা জ্যোতির মন্ত্রে,

তাই অন্তরে অমৃত যে ভরে পুলক তন্ত্রে।

বাণী মহাবর অম্লান মনে,

জননী গো নমি রাতুল চরণে,

পূজায় উল্লাসে ধরণী যে হাসে সুরভিত বাতে।

 

 

শ্রীশ্রীচণ্ডিকা গুণাতীতা ও গুণময়ী।

সগুণ অবস্থায় দেবী চণ্ডিকা অখিলবিশ্বের প্রকৃতিস্বরূপিণী।

তিনি পরিণামিনী নিত্যার্দিভ্যর্চৈতন্যসৃষ্টিপ্রক্রিয়ায় যে শক্তির মধ্য দিয়ে ক্রিয়াশীলরূপে অভিব্যক্ত হন, সেই শক্তি বাক্‌ অথবা সরস্বতী;

তাঁর স্থিতিকালোচিত শক্তির নাম শ্রী বা লক্ষ্মী;

আবার সংহারকালে তাঁর যে শক্তির ক্রিয়া দৃষ্ট হয় তা-ই রুদ্রাণী দুর্গা।

একাধারে এই ত্রিমূর্তির আরাধনাই দুর্গোৎসব।

এই তিন মাতৃমূর্তির পূজায় আরত্রিকে মানবজীবনের কামনা, সাধনা সার্থক হয়, চতুর্বর্গ লাভ করে মর্তলোক।

 

 

অমল কিরণে ত্রিভুবন-মন-হারিণী

হেরিনু তোমার রূপে করুণা নাবনী,

নমি নমি নমি নিখিল চিতচারিণী,

জাগো পুলক নিত্য নূপুরে জননী।

তোমারেই পূজিছে দেবদেবী দ্বারে দ্বারে,

রাগিণী ধ্বনিছে আকাশবীণার তারে –

তনু-মন-প্রাণ নিবেদি তোমারে মনে।

প্রেম সুর ধন পূজা রূপের এ ধরণী

নমি জগতের সকল ক্ষেমকারিণী,

লভিনু তোমার প্রেমে করুণা লাবণি।

 

 

ষড়ৈশ্বর্যময়ী দেবী নিত্যা হয়েও বারংবার আবির্ভূতা হন।

তিনি জগৎকে রক্ষা ও প্রতিপালন করেন।

দেবীর করুণা অসীম;

বিধাতৃ বরদার করুণার পুণ্যে বিশ্বনিখিল বিমোহিত;

অমৃতরসবর্ষিণী মহাদেবীর অমল রূপের সুষমা প্রতিভাত ধরিত্রীর ধ্যান গরিমায়।

 

 

জয়ন্তী মঙ্গলা কালী ভদ্রকালী কপালিনী ।

দুর্গা শিবা ক্ষমা ধাত্রী স্বাহা স্বধা নমোঽস্তু তে ।।

মধুকৈটভবিধ্বংসি বিধাতৃ-বরদে নমঃ।

রূপং দেহি জয়ং দেহি যশো দেহি দ্বিষো জহি ।।

মহিষাসুরনির্ণাশি ভক্তনাং সুখদে নমঃ ।

রূপং দেহি জয়ং দেহি যশো দেহি দ্বিষো জহি ।।

বন্দিতাঙ্ঘ্রিযুগে দেবি সর্বসৌভাগ্যদায়িনি ।

রূপং দেহি জয়ং দেহি যশো দেহি দ্বিষো জহি ।।

অচিন্ত্যরূপচরিতে সর্বশত্রুবিনাশিনি ।

রূপং দেহি জয়ং দেহি যশো দেহি দ্বিষো জহি ।।

নতেভ্যঃ সর্বদা ভক্ত্যা চাপর্ণে দুরিতাপহে ।

রূপং দেহি জয়ং দেহি যশো দেহি দ্বিষো জহি ।।

দেহি সৌভাগ্যমারোগ্যং দেহি দেবি পরং সুখম্‌ ।

রূপং দেহি জয়ং দেহি যশো দেহি দ্বিষো জহি ।।

বিধেহি দেবি কল্যাণং বিধেহি বিপুলাং শ্রিয়ম্‌ ।

রূপং দেহি জয়ং দেহি যশো দেহি দ্বিষো জহি ।।

দেবি ভক্তজনোদ্দাম-দত্তানন্দদয়েঽম্‌বিকে ।

রূপং দেহি জয়ং দেহি যশো দেহি দ্বিষো জহি ।।

তারিণি দুর্গসংসার-সাগরস্যাচলোদ্ভবে ।

রূপং দেহি জয়ং দেহি যশো দেহি দ্বিষো জহি ।।

 

বিশ্বপ্রকৃতি মহাদেবী দুর্গার চরণে চিরন্তনী ভৈরব ধ্যানরতা পূজারিণী ভৈরবীতে গীতাঞ্জলী প্রদান করে ধন্যা হলেন।

তাঁর গীতবাণী আজ অনিলে সুনীলে নবীন জননোদয়ে দিকে দিকে সঞ্চারিত।

 

শান্তি দিলে ভরি।

দুখরজনী গেল তিমির হরি।

প্রেমমধুর গীতি

বাজুক হৃদে নিতি নিতি মা।

প্রাণে সুধা ঢালো

মরি গো মরি।

 

 



Share on

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *