ভাবের পাগল ভবা পাগলা
ভাবের পাগল ভবা পাগলা
‘ভবা পাগলার’ আসল নাম ‘ভবেন্দ্র মোহন চৌধুরী’। তাঁর জন্ম ১৯০২ খ্রিস্টাব্দে। তাঁর পিতার নাম ‘গজেন্দ্র কুমার চৌধুরী’। ভবা পাগলারা ছিলেন তিন ভাই এক বোন। তিনি দেখতে ছিলেন একরকম হালকা পাতলা গড়ন,গায়ের রঙ উজ্জ্বল শ্যামবর্ণ,মাথায় ঝাঁকড়া চুল,চিবুকে এক গোছা দাঁড়ি। গানের ভণিতায় তিনি নিজেকে ভবা বা ভবেণ বলে উল্লেখ করেছেন। মানিকগঞ্জ অঞ্চলে তিনি ভবা পাগলা নামে খ্যাত। তাঁর গান মুহাম্মদ মনসুর উদ্দিন ও অধ্যাপক উপেন্দ্রনাথ ভট্টাচার্যের দৃষ্টি আকর্ষণ করে ছিল অনেক আগেই। অধ্যাপক উপেন্দ্রনাথ ভট্টাচার্য ‘বাংলার বাউল ও বাউল গানে’ তাঁর দুটি গান ছেপেছিলেন। মুহাম্মদ মনসুর উদ্দিন ‘হারামণির সপ্তম খণ্ডে’ ভবা পাগলা সম্পর্কে লিখেছেন, ভবা পাগলা একজন নামকরা বাউল গান রচয়িতা। তিনি ঢাকা জেলা ধামরাই উপজেলা আমতা গ্রামের অধিবাসী ছিলেন। স্বাধীনতার পর তিনি বাংলাদেশ ত্যাগ করে ভারতে চলে যান। তাঁর গান মানিকগঞ্জ জেলা সহ বাংলাদেশ ও ভারতে বিভিন্ন স্থানে পরিচিতি লাভ করে ও গীত হয়ে আসছে। তিনি মূলত শ্যামা সঙ্গীত,ভাব গান,গুরুতত্ত্বের গান,দেহতত্ত্বের গান ও সৃষ্টিতত্ত্বের গান রচনা এবং সুর নিজেই করেছেন।ভবা পাগলা ১৯৮৪ খৃস্টাব্দে দেহ ত্যাগ করেন।
১।এমন মানব জনম আর পাবেনা
বারে বারে আর আসা হবে না।।
তুমি যাহা করে গেলে আসিয়া হেথায়
চিত্র গুপ্ত লিখিল খাতায়
হিসাব করিবে সেই বিধাতায়
তাঁর কাছে ফাকি-জুকি কিছুই চলেনা।।
সাবধানে চলো মন হও হুশিয়ার
তোমার বেলা যে বয়ে যায় আসে অন্ধকার।।
জুড়িয়া রয়েছে হৃদয় আকাশ
ভবা কহে চোখ মেলে চেয়ে দেখোনা।।
২।ওরে মানুষ,দেখবি যদি ভগবান।
ছেড়েদে তোর হিংসা বৃত্তি
ঐইত বিঘ্ন অতি প্রধান।।
ছেড়েদে তোর ভিন্ন বেধ
দেখনা শাস্ত্র দেখনা বেদ।।
বাইবেল কোরআন নয়রে প্রভেদ
শোনরে হিন্দু শোন মুসলমান
ভিন্ন নয়রে আল্লা-হরি
শোনরে ফকির ব্রহ্মচারী ।।
দেখতে তাঁরে হয়না দেরি
সঁপে দে তোর হৃদয় প্রান
কিবা মসজিদ কিবা মন্দির
শাস্ত্রে তা যেমন বন্দি।।
বাইরে আয়রে দেখরে সন্ধি
উড়ছে নিশান বিশ্বখান
ভবা পাগলা কইবে কত
সবাইর পদে হয় সে নত।।
দেখনা ভেবে শত শত
আসা যাওয়া একই সমান।
তথ্য প্রাপ্তিঃ
সামিয়ূল ইসলাম,বাংলাদেশের লোকসঙ্গীতের শ্রেনিবিন্যাস,বাংলা একাডেমী।