নমশূদ্র ব্রাহ্মণের সন্তান
Namasudra Brahman Er Sontan
কথা, সুর ও শিল্পী : নকুল বিশ্বাস।
নমশূদ্র ব্রাহ্মণের সন্তান
হিন্দু সমাজে জাত নিয়ে জাতাজাতি চলছে দীর্ঘদিন ধরে। কে উঁচু কে নিচু এ নিয়ে চলছে দ্বেষাদ্বেষী, রেষারেষি। আশা করি আমার এ গানটি সব দ্বন্দ্বের অবসান ঘটাতে সক্ষম হবে।
[জানি অবাক হবে শুনে তোমরা]-২
আমার আজিকারই গান,
[নমশূদ্র ব্রাহ্মণের সন্তান।]-২
[দ্যাখো ১০ দিনে শুদ্ধতিরীতি]-২
ওদের মাঝে বর্তমান,
[নমশূদ্র ব্রাহ্মণের সন্তান।]-২
(ব্রাহ্মণ নমস মুনির উত্তরসূরী আজকের নমশূদ্র জাতি। তাই জন্মগত কারণেই তারা ব্রাহ্মণ। তাছাড়া শাস্ত্রের ভাষায় “দশাহেন বিপ্রো শূদ্রো মাসেন শুধ্যতি” ভাবার্থ এই, যারা দশদিন অশৌচ পালন করেন তারা ব্রাহ্মণ আর যারা একমাস অশৌচ থাকেন তারা শূদ্র। লক্ষ্য করবেন নমশূদ্রগণ দশদিনেই শুদ্ধতিরীতি পালন করে থাকেন। তাই, শাস্ত্রমতেও তারা ব্রাহ্মণ পর্যায়ভুক্ত।)
দ্যাখো ১০ দিনে শুদ্ধতিরীতি,
১০ দিনে শুদ্ধতিরীতি
ওদের মাঝে বর্তমান,
[নমশূদ্র ব্রাহ্মণের সন্তান।]-২
[ওরা নমস মুণিবরের বংশ
ব্রাহ্মণের এক পতিত অংশ]-২
[রাজা বল্লাল করলো ধ্বংস]-২
দিলো সমাজে চন্ডালের মান,
[নমশূদ্র ব্রাহ্মণের সন্তান।]-২
(বঙ্গের রাজা বল্লাল সেনের অনাচার-অবিচারের সমালোচনা তথা বিরোধিতা করতে গিয়ে নম জাতির উপরে নেমে আসে নির্মম রাজ অত্যাচার। বল্লাল নমদের চন্ডাল আখ্যা দিয়ে নগর-বন্দর থেকে বিতাড়িত করে দেন। সেদিন নমদের সঙ্গে পার্ষদ বিপ্রেরাও নির্যাতিত হয়েছিলেন। বল্লাল পৈতা ব্যবহার পর্যন্ত নিষিদ্ধ করে দেন। অথচ অত্যাচারী বল্লালের সেই অপবাদের সূত্র ধরে আজও বর্ণ হিন্দুরা নমশূদ্র জাতিকে অস্পৃশ্য ভাবেন। তাই স্মরণ করিয়ে দিতে চাই…)
[ওরা নমস মুণিবরের বংশ
ব্রাহ্মণের এক পতিত অংশ]-২
[রাজা বল্লাল করলো ধ্বংস]-২
দিলো সমাজে চন্ডালের মান,
[নমশূদ্র ব্রাহ্মণের সন্তান।]-২
ইতিহাসের এই তো চিত্র,
ঘোষ-বোস-গুহ-দত্ত-মিত্র
ওরাই তো শূদ্রের দৌহিত্র
(একাদশ শতাব্দীতে বঙ্গের রাজা আদিশূর পুত্রেষ্ঠী যজ্ঞ করতে ভারতের বর্তমান কনৌজ থেকে পাঁচজন ব্রাহ্মণ এনেছিলেন। ঐ পাঁচজন ব্রাহ্মণের সেবাযত্ন করার জন্য পাঁচজন ভৃত্য অর্থাৎ চাকরও সঙ্গে আসেন। সেই পাঁচজন ভৃত্যের বংশধর ঘোষ-বোস-গুহ-দত্ত-মিত্র রাজা বল্লালের আমলে কুলীন উপাধি পেয়ে বর্তমানে হিন্দু সমাজের শীর্ষস্থানে রয়েছে।)
ইতিহাসের এই তো চিত্র,
ঘোষ-বোস-গুহ-দত্ত-মিত্র
[ওরাই তো শূদ্রের দৌহিত্র]-২
মিথ্যা নয় এ তথ্যখান,
[নমশূদ্র ব্রাহ্মণের সন্তান।]-২
শোনো আমার যত সাথী,
সাহা-কুন্ডু-শূদ্র জাতি
(ব্রহ্মবৈবর্ত পুরাণে বর্ণিত বায়ান্নটি সংকর জাতির মধ্যে সুন্ডি বা সুরি অর্থাৎ সাহা, কৈর্বত, কাপালি, ধীবর, রজত অসৎ শূদ্র শাস্ত্র বিচারে নিকৃষ্ট শূদ্র। মনুসংহিতায় বলা হয়েছে “পরদার এসো জায়তে পতৌ জীব অতি কুন্ড” অর্থাৎ পতি জীবিত থাকতে তাহার স্ত্রীতে অপর কর্তৃক যে সন্তান উৎপাদিত হয় তাহাকে কুন্ড বলে। তাই, এসব সম্প্রদায়ের জাতের বড়াই করা নিতান্তই হাস্যকর।)
শোনো আমার যত সাথী,
সাহা-কুন্ডু-শূদ্র জাতি
[নিয়ে-একমাস অশৌচ মাথা পাতি]-২
নিজেরাই দেয় তার প্রমাণ,
[নমশূদ্র ব্রাহ্মণের সন্তান।]-২
(ব্রহ্মবৈবর্ত পুরাণের ভাষায় নয়টি জাতি বার গুণিকাজাত। কর্মকার, স্বর্ণকার, মালাকার, কুমার, শাঁখারী, কাঁসারী, সূত্রধর এদের মধ্যে অন্যতম। তাছাড়া ব্রাহ্মণদেরও জাতির গর্ব করার কোনো কারণ নেই। কারণ, রাজা আদিশূর কর্তৃক আনীত পঞ্চব্রাহ্মণের ঔরসে নিকৃষ্টা শূদ্রা নারীর গর্ভে বাংলার বর্তমান ব্রাহ্মণ শ্রেণীর উৎপত্তি হয়েছে। মা যেহেতু অস্পৃশ্যা শূদ্রাণী তাই বুঝি ব্রাহ্মণ সমাজে আজও পৈতা নেয়ার সময় মায়ের মুখ দেখা নিষিদ্ধ রয়েছে। তাই আসুন মিথ্যা জাতের অহংকার ঝেড়ে ফেলে দিয়ে আমরা সবাই একই বিশ্বপিতার সন্তান বলে গণ্য হই।)
[নকুল কয় ভাই শোনো কিছু,
কারেও ভেবোনা নিচু]-২
[ছোটো মানবতার পিছু]-২
দাও জাতির গর্ব বলিদান,
[নমশূদ্র ব্রাহ্মণের সন্তান।]-২
দ্যাখো ১০ দিনে শুদ্ধতিরীতি,
১০ দিনে শুদ্ধতিরীতি
ওদের মাঝে বর্তমান,
[নমশূদ্র ব্রাহ্মণের সন্তান।]-৪