হৃদি-বৃন্দাবনে বাস যদি কর কমলাপতি Lyrics
Hridi Brindabone Bas Jodi Koro Kamalapati Lyrics
হৃদি-বৃন্দাবনে বাস যদি কর কমলাপতি Lyrics
হৃদি-বৃন্দাবনে বাস যদি কর কমলাপতি ৷
ওহে ভক্তিপ্রিয়, আমার ভক্তি হবে রাধাসতী ৷৷
মুক্তি কামনা আমারি, হবে বৃন্দে গোপনারী,
দেহ হবে নন্দের পুরী, স্নেহ হবে মা যশোমতী ৷৷
আমায় ধর ধর জনার্দন, পাপভার গোবর্ধন,
কামাদি ছয় কংসচরে ধ্বংস কর সম্প্রতি ৷৷
বাজায়ে কৃপা বাঁশরি, মনধেনুরে বশ করি,
তিষ্ঠ হৃদিগোষ্ঠে পুরাও ইষ্ট এই মিনতি ৷৷
প্রেমরূপ যমুনাকুলে, আশাবংশীবটমূলে,
স্বদাস ভেবে সদয়ভাবে, সতত কর বসতি ৷
যদি বল রাখাল-প্রেমে, বন্দী থাকি ব্রজধামে,
জ্ঞানহীন রাখাল তোমার, দাস হবে হে দাশরথি ৷৷
অষ্টাদশ শতকে বাংলা পদকর্তাদের মধ্যে একটি উজ্জ্বল জ্যোতিষ্ক- দাশরথি রায়। দাশরথি রায়ের সৃষ্ট পদে অভিভূত ছিলেন সমসাময়িক যুগের প্রায় সকলে। অদ্ভূত কবিত্ব-প্রতিভা, ভাষাজ্ঞান থাকা সত্বেও তিনি পদাবলী, পাঁচালীর বাইরে তেমন কিছু লেখেননি। এটা ভাবা ভুল হবে যে তিনি কেবলমাত্র একজন গ্রাম্য কবিয়াল, তাই এর বেশী তাঁর জ্ঞান-বুদ্ধিতে ছিল না। বলে দিই- তিনি ইংরেজি শিক্ষায় শিক্ষিত লোক ছিলেন, ইংরেজের বেতনভূক্ত চাকুরীজীবিও ছিলেন। কিন্তু কবি হিসেবে যশলাভ তাঁর হল না,- হয়ত এটা বলা সমীচীন যে তিনি এমন একটা সময়ে অবতীর্ণ হয়েছিলেন, যখন বাংলার সঙ্গীত-সাহিত্য সেকেলে খোলটি পালটাতে আরম্ভ করেছিল, আর তিনি সেকেলেই রয়ে গেলেন! সুনীল গাঙ্গুলির ‘সেই সময়’ আবার দাশরথির আরেক চরিত্রের সামান্য আভাস দেয়- সে কথায় আসছি না, সেখানেও আখেরে আমরা কীর্তিমান দাশরথি রায়কেই পাচ্ছি।
তাঁর ভক্তিভাবাত্মক পদে আপ্লুত বাংলার শাক্ত বৈষ্ণব সকলেই। দাশরথি রায়ের নানান শাক্তপদ আজও মুখে মুখে ফেরে এবং এর মধ্যে যেমন ‘দোষ কারো নয় গো মা’- অমর হয়ে রইবে যুগ যুগ, তেমনি আরো রয়েছে, তবে তার লেখা বৈষ্ণবীয় পদ ততটা সমাদৃত নয়, এর কারণ জানি না। আমি এখানে তেমনই একটি কীর্তনের পদ তুলে আনলাম। এই গানটিও শ্রীশ্রীরামকৃষ্ণকথামৃতে উল্লেখিত।
দাশুর পাঁচালীতে গানটি যেভাবে লেখা আর আমি যে বাণীতে গাইছি তাতে হেরফের অতি নগন্য বলে এ নিয়ে কোন ঘোঁট পাকাচ্ছি না। তবে সেখানে গানটির যে রাগোল্লেখ তা নিয়ে দু’কথা বলতেই হয়। সেখানে ললিত-বিভাস লেখা! দুঃখের সাথে বলতে হয় এই সুরে এই গানের আর প্রচলন রইল না। মূল সুরের সংরক্ষণের অভাবে বাংলার পুরাতনী গানগুলো বস্তুত সিংহভাগ স্রেফ কবিতা হিসেবে টিকে আছে, আর যা গাওয়া হয় তার প্রায় সবই পরবর্তী কারো সুরে প্রচলিত হয়েছে।
সৌভাগ্যবশত গানের তালটি (ঝাঁপ) দাশুর পাঁচালীর বাইরে বেরোয়নি! যাই হোক, কেত্তনের আগে গৌরচন্দ্রিকা দিয়ে দিলাম।