গৌর পূর্ণিমায় “পঞ্চ গ-কার” নিয়ে মহোৎসবী আলাপন – শ্রী কমলেশ ধর
গৌর পূর্ণিমায়”পঞ্চ গ-কার” নিয়ে মহোৎসবী আলাপন”
[বরমা জ্বালাকুমারী বাড়ী গীতা সংঘের নিবেদন]
[পয়ার ছন্দে পালা গানের কিছু অংশ দিলাম]
|| শ্রী কমলেশ ধর ||
————————————————-
গৌর পূর্ণিমায় “পঞ্চ গ-কার” নিয়ে মহোৎসবী আলাপন – শ্রী কমলেশ ধর
“গুরু”-“গঙ্গা”-“গায়ত্রী”-আর
“গীতা”-“গোবিন্দ”।
শুদ্ধ ভক্ত হবি যদি
রাখিবি এই সম্বন্ধ।।
অনাড়ম্বর ভাব-ভক্তিতে
জপনে~স্মরণে।
কীইবা দরকার টিকি-মালা-
তিলকী ফ্যাশনে।।
শাক্ত-শৈব-বৈষ্ণব-কিংবা সৌর-গাণপত্য।
ভেদ-বিবাদী তর্ক ছেড়ে
সবে হও না ঐক্য।।
“প্রজ্জ্বলনে লাগবে আগুন” এইতো-স্বত:সিদ্ধ।
সিদ্ধ গুরুর কৃপা বিনে
হয় কি কেহ ঋদ্ধ ?।।
“অসিদ্ধ রং-কাপড়ার”-
গুরুগিরির ব্যবসা।
এমন গুরুর ফাঁদে পড়ে
“ভক্ত-জীবন ভ্যাপসা”।।
“শিষ্যের ছোয়া খায় না গুরু”,
এ কেমন আচারী ?।
এমন জাতের কুলুগুরুর
মুখে ঝাঁটা মারি।।
“গুরু-শিষ্য অভেদ আত্মা”
বেদ-বেদান্তের ভাষ্য”।
“কুলুগুরু” নাম ধরিয়া
বানায় অনেক শিষ্য।।
শিষ্যের কানে মন্ত্র দিলেন
করিলেন ফিস্-ফিস্।
“গুরু গেলে তোদের বাড়ী
“মাসিক-চাঁন্দা দিস”।।
——————————–
ব্রহ্মা-বিষ্ণু-হর-গোবিন্দ
শ্রীরাধে-গৌর জগন্নাথ।
গুরু-গণেশ-দিবাকরে
নমি চণ্ডী লোকনাথ।।
শুদ্ধ-ভক্তের চরণ-ধূলি
আমার অঙ্গে নিলাম।
বুড়াকালীর কৃপাতে ভাই
“পঞ্চ গ-কার” দিলাম।।
জ্বালাকুমারী মাতা আমার
নাশুক ভক্তের জ্বালা।
তুষ্ট হলে আনবে ডেকে
কৃষ্ণ নন্দলালা।।
শ্রীঅদ্বৈত-সুরেশ্বরের
কৃপা মাথায় নিয়ে।
সহজতত্ত্ব “পঞ্চ গ-কার”
দিলামতো বুঝিয়ে।।
একই অঙ্গে শ্যাম ও শ্যামা
আমার বুড়াকালী।
“পশ্চিম-মুখীর রহস্যটা”
বোবায় কেমনে বলি !।।
[চট্টগ্রামের চন্দনাইশের “বরমা”-গ্রামেতে।
“মুণ্ডমালী-বনমালী”
আছেন সবার হিতে।।
পলাশীরও যুদ্ধের আগে
যার ইতিহাস র’য়।
অল্প কথায় কেমনে দেবো
সেসব পরিচয়।।
শাক্ত-শৈব-বৈষ্ণব-ব্রাহ্মণ ক্ষত্র-বৈশ্য-শুদ্র।
সকল ভক্তের মিলন-তীর্থ
বুড়াকালির ক্ষেত্র।।
“বরমা”তেআছে রে ভাই
দারুণ এক সম্প্রীতি।
জাগ্রত এই শক্তি পীঠে
মিলে সকল জাতি।।]
*************************************
♦বরমা শ্রীশ্রীজ্বালাকুমারী গীতা সংঘের নিবেদন♦
প্রশ্নঃ মানুষ কখন কৃষ্ণভক্তির স্তরে আসে?
উত্তরঃ শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভু বলেছেন—
কৃষ্ণভক্তি জন্মমূল হয় সাধুসঙ্গ।
ভক্তসঙ্গ বা সাধুসঙ্গ ক্রমেই কারও হৃদয়ে
কৃষ্ণভক্তি জন্মায়।
শ্রীমদ্ভাগবতে শ্রীকৃষ্ণের প্রতি মহারাজ
মুচুকুন্দের উক্তিটি লক্ষ্যনীয়—
ভবাপবর্গো ভ্রমতো যদা ভবে-
জ্জনস্য তর্হ্যচ্যু্ত সৎসমাগমঃ।
সৎসঙ্গমো যর্হি তদৈব সদগতৌ
পরাবরেশে ত্বয়ি জায়তে রতিঃ॥
“জীব নানা যোনি ভ্রমণ করতে করতে বহু
জন্মের পর কোনও সৌভাগ্যক্রমে যে-জন্মে
তার ভব বন্ধন দশার ক্ষয় হয়, সেই কালে হে
অচ্যুত! তার ভাগ্যে ভক্তজনের সঙ্গ ঘটে।
আর সেই ভক্তসঙ্গের ফলে পরমগতি স্বরূপ
নিখিল-কার্যকারণ-নিয়ন্তা কৃষ্ণ তোমার প্রতি তার
ভক্তি উদয় হয়।” (ভাগবত ১০/৫১ ৫২)
শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভুর পার্ষদ শ্রীল বল্লভাচার্য
উল্লেখ করেছেন—মহৎব্যক্তির কৃপার
মাধ্যমে ভগবান যখন কাউকে ভক্তিদান করেন,
তখন সে ভগবানের নাম কীর্তন করে
পরম আনন্দ প্রাপ্ত হয়।
“””””””””””””””””””””””””””””””””””””””
★ আজ গৌর পূর্ণিমাতে
সকল কৃষ্ণভক্তের প্রতি
বৈষ্ণবীয় শুভেচ্ছাসহ
একটি ভজন নিবেদন করলাম।
—————————————-
শ্রী কৃষ্ণ ~চৈতন্য `~~
নিমাই~বিশ্বম্ভর
কলির কলুষ বিনাশ করো
“নিরস্ত্র ঈশ্বর”।
“প্রেম-অস্ত্রই” মহাঅস্ত্র
জবরধ্বস্তি নাই।
তাইতো আজ বিশ্বে প্রসার
গৌরাঙ্গ গোসাই।।
সারাবিশ্বে আছে যত
নগরাদি গ্রাম।
দেশে-দেশে পাচ্ছে প্রচার
গৌর-কৃষ্ণের নাম।।
“গৌর-বাণী” সত্য আজি,
চাঁদ-গাজীরাও বুঝে।
ছ্যুৎমার্গীরাও হচ্ছে অবস,
কৃষ্ণ প্রেমে মজে।।
গোস্বা কিচ্ছু ধর্মবণিক
চাল-কলার ব্রাহ্মণ।
এক আত্মারে যারা দেখায়
নানান বিভাজন।।
এবেও দেখি ক’-য় বামুণের
গৌরাঙ্গে বিদ্বেষ।
আন্ধার দেশে চশ্মা বিক্রির
দিনটা হবে শেষ।।
চার দশক আগের “ঠাওরায়”
করলো আক্রমণ।
আজ দেখি তার আঙ্গিনায় নামের আয়োজন।।
টিটকারীতে বলতো ওরা ,
শুদ্রদের উৎসব ।
একপাতেতে প্রসাদ নিতে
করতো উপদ্রব।।
ভক্তের ছোয়া না খেলে দেব্,
কিসের ভগবান।
আর দেরী নাই, ওগো গোসাই
পাইবা অপমান।।
আর দেরী নাই ব্রাহ্মণ্যবাদ
হইবে অবসান।।।
“”””””””””””””””””‘”””””””””””””””””””
♥নিতাই-গৌর ভজন♥
{মোলায়েম সুরে ও ধীর লয়ে}
[বিশুদ্ধ বৈষ্ণবীয় ভাবের ভজন]
।। শ্রী কমলেশ ধর ।।
——————————–
ও মন ~
আগে হও চেতন
চেতন হলে মিলবে রতন
চৈতন্যের চরণ।
চেতন করার কৌশল জানে
আত্মদর্শী গুরুধন।। ১
ওরে,চেতন হলে মিলবে রতন
শ্রী গৌরাঙ্গের কৃপাধন।
চেতন হলে মিলবে রতন
চৈতন্যের চরণ।।০
———————————–
শুদ্ধা ভক্তি অনুরক্তি
মনের কুহরে,
ভক্তি বিনে গুরো-বীজ
নাহি অংকুরে।
পানি উত্তাপ বাতাস পেলে
বীজের হবে অংকুরণ।।২
চেতন হলে মিলবে রতন
চৈতন্যের চরণ।।০
———————————-
নিতাই ছাড়া গৌর না মিলে
বৈষ্ণব জনে কয়,
অযতনে বীজটা থুইলে
চারা নাহি হয়।
গুরু নিষ্টায় ভক্তি বারির
পরিচর্য্যার প্রয়োজন।৩
চেতন হলে মিলবে রতন
চৈতন্যের চরণ।।০
———————————–
কর্ম নিষ্ঠায় ভক্তি বিহীন
কেবল অঙ্গ সাজ,
লোক দেখানো ভেক পোশাকী
নিছক কারু কাজ।
মন-মুখেতে এক না হলে
কে বা বৈষ্ণব সাধুজন ? ।।৪
চেতন হলে মিলবে রতন
চৈতন্যের চরণ।।০
———————————-
আগে জাগাও কুণ্ডলিনী
নিতাই সাধিতে,
ভক্তি ঘুরির লাটাই দাও
তাঁহার হাতেতে।
নিতাই গৌর প্রেমানন্দে
করো শ্রী~গুরু ভজন।।৫
চেতন হলে মিলবে রতন
চৈতন্যের চরণ।।০
———————————-
জ্বালতে প্রদীপ লাগবে আগুন
সকলের জানা,
আঁকা ফুলে দেখো আবার
ভ্রমর বসে না।
আঁকা বৈষ্ণব সাজা সাধু
নিতাইয়ের বিরাগ~ভাজন।।৬
শুণো ওগো তপোধন
চৈতন্যকে ধরতে হলে
নিতাই ভজ মন।।
*******************************
♦ভক্তির হোলি না রঙের হোলি?”
|| শ্রী কমলেশ ধর||
[ সকলকে রাধা-গৌরপ্রীতিময় শুভেচ্ছা]
————————————————-
রাধাকে ছাড়া শ্যাম আধা
বলো রাধে-শ্যাম,
কৃষ্ণ প্রেমে আমি রাধা
ভজি আত্মা-রাম।
জয়অ রাধে, জয়অ রাধে,
জয়অ রাধে-শ্যাম।।
—————————–
গোলকেরর ব্যাসার্ধে
পরিধির উর্ধ-অধে
জপে অবিরাম।
আবীরে কুঙ্কুমে
চরণে চুম্বনে
মথি সেই নাম।।
————————————
জয়অ-রাধে জয়অ-রাধে
জয়অ-রাধে~শ্যাম।।
কালা-গোরা গুলাইতে
আবীরটা দিলাম।
~~~~~~~~~~
{♦দোল পূর্ণিমার শুভেচ্ছায়
দিলাম একটি বাউলা গান।}
————————————-
সে-সব-কালে খেলতো হলি
মানুষ ছিল সংযমী,
কলির গ্রাসে ব্যস্ত মানুষ
চর্চা এখন কাম-কামী।
রঙ-ঢঙেতে অরুচি ভাই
ভক্ত কেহ কম দামী।
বোল হরি-বোল হরি বলে
আমি গৌরের ঠ্যাং চুমি।।১
::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::
বহি-রঙে অরুচি মোর
গৌর-গোবিন্দের চরণ সার,
মনের রঙে হোলি খেলি
নিতাই রাখি হৃদ-মাঝার।
ভক্তি কুঙ্কুম ভাবের আবীর
হলি খেলায় দিই আমি।।২
বোল হরি বোল হরি বলে
গৌর-গোবিন্দের ঠাং চুমি।।।
———————————-
ভক্তির আবীর নয়ন জলে
দেবো তাহার পদ্-তলে,
হৃৎ-কমলের নিতাই সখা
গৌর-গোবিন্দের ঘরামী।
বুড়াকালীর কালায় এনে
কালায় পরাই রাম-নামী।।৩
বোল হরি-বোল হরি বলে
হলি খেলি তাই আমি।।।
———————————–
গুরু আমার পাগলা হরা
কুণ্ড খেয়ায় মাতোয়ারা
পালে দিলাম আবীর ছড়া
চলছে খেয়া উজানী।
কুঙ্কুম-আবীর রাধায়-আধা
গোলক ধাধায় রই আমি।।
হলি খেলায় আনলো যেজন
তাহারে দিই প্রণামী।।৪
*******************