হাল ছেড়ো না মাঝি – সঞ্জীব চট্টোপাধ্যায় | আবৃত্তি – মেধা বন্দোপাধ্যায়

হাল ছেড়ো না মাঝি – সঞ্জীব চট্টোপাধ্যায়

Haal Chero Na Majhi – Sanjib Chattopadhyay

(ছায়ানটের অংশ বিশেষ )

 

আবৃত্তি – মেধা বন্দোপাধ্যায়

প্রেম আর বেল একই স্বভাবের
সময় হলে পরবে
প্রেম কি যাচিলে মিলে,
আপনি উদয় হয় শুভযোগ পেলে;
এ সেই অর্ধকুম্ভ, কুণকুম্ভের- মতো!
গ্রহে গ্রহে যোগ হবে তবেই হবে।

আমিই সেই পিয়ন, কোটের পেয়াদা,
সমন আমি ধরাবোই;
চিঠি আমি গুজবোই;
যখন বাড়ি ফিরছে, তখন হবে না;
ধোলাইয়ের ভয় আছে;
যখন পাড়া ছেড়ে যাচ্ছে;
তখন পেছন পেছন যেতে হবে-
বে-পাড়ায় গিয়ে র্নিজনে কুটুস।
এবার সুযোগ এসে গেলো
সে চলেছে – আমি চলেছি
মাঝে হাত কুড়ির ব্যবধান – বেশ যাচ্ছিলো।
হঠাৎ ঘুরে গেলো; আবার বাড়ি মুখো’
আমার পাশ দিয়ে হন হন করে হেঁটে বাড়ির দিকে চলল—
কিছু ভুলে টুলে গেছে হয়তো;
– এ রকম গোলমেলে মেয়েছেলে আমি লাইফে দেখিনি;
– এ সব মেয়েছেলে সংসার করবে কি করে; যার কোন মতির স্থির নেই।
আমিও যদি হঠাৎ ফিরি;
তাহলে লোকে সন্দেহ করতে পারে
তাই অকারণে বেশ কিছু দূর সামনে হেঁটে গেলাম;
প্রেমের ভীত আর বাড়ির ভীত
একই জাতের ব্যাপার
খেটে খুঁটে তৈরী করতে হয়।
রোদে পুড়ে, জলে ভিজে, বেকার একটা চক্কর মেরে
আমি ফিরে এলুম গোপীদার দোকানে;
গোপীদার কচুরীর দোকান
গোপীদা বললে, কী হলো?
তুমি গেলে ও দিকে, ও এলো এ দিকে
ধেড়িয়েছ নিশ্চয়ই! কেস টা কি?
বললাম কেস আবার কি; নেজেঁ খেলছে
মহা ধরিবাজ, আগেই বলেছিলুম;
মেয়েছেলে কি চিজ্ রে বাবা –
শোন বসন্ত, তুমি – – একটা কাজ কর!
ছোট বেলা থেকে শুনে আসছি
বীর ভোগ্যা বসুন্ধরা;
বসুন্ধরা মানে মেয়ে
তুমি – তুমি, তুমি বীর হও!
বীর হও? বীর হব কি করে? যুদ্ধ করবো?
আরে – শোন না;
আমাদের পাঁড়ায় একটা গুতুন্তে ষাঁড় আছে জানো তো?
ঐ ষাঁড়টার পিঠে চেপে বসে তুমি পাড়া প্রদক্ষিণ কর।
প্রমাণ করো যে তুমি বীর
তোমার খুব নাম হবে, সেই নামে নামে তোমার কাছে এসে যাবে।
আমি জানি এ রকম রসিকতা আমাকে অনেক সহ্য করতে হবে।
গোপীদা বললে, বসন্ত; আর একটা কাজ তুমি করতে পারো।
তুমি এখন বেশ কিছুদিন শিবের মাথায় জল ঢালো
মেয়েরা যদি জল ঢেলে বর পায় তুমিও বউ পাবে।
কিন্তু বউ পেলে খাওয়াবে কি? রোজগার -পাতি তো কিছু নেই;
লোকটার মাথায় কিস্সু নেই, সব গুলিয়ে ফেলেছে;
প্রেম আর বিয়ে সব গুলিয়ে ফেলেছে একেবারে!
সারাজীবন টাকে বসে পয়সা আর পয়সা আর ঢামার মতো একটা ভূঁরি
না পড়েছে কবিতা, না পড়েছে উপন্যাস-
আরে প্রেম খুক খুক কাশি, রক্ত, সমাধি — আধুনিক গান
তোমার সমাধি ফুলে ফুলে ঢাকা;
প্রেম বলে নাই, তুমি নাই –
প্রেমিক মরলে চিতায় পুড়ানো হয় না; সমাধি দেয়া হয়;
আর তার পাশে থাকে শিউলি, বকুল —
গোপীবেটা যদি রবীন্দ্রনাথের গানটাও একটু মন দিয়ে শুনতো
তাহলে অনেক কিছু বুঝতে পার – তো;
আরে পড়তে হবে না, শুধু কানটা গানের দিকে রাখা;
এ গান টা প্রায়ই হয় – আমি জেনে শুনে বিষ করেছি পান’
গানটা আমার একটু একটু আসে –
জানালা খুললে যেমন উনুনের ধোঁয়া আসে –
অটোমেটিক আসে!
বেশ ধরেছিলুম – জেনে শুনে বিষ করেছি পান – গলা পরিস্কার,
সুরটাও বেশ লেগেছিল – গোপী পাঠা বলল এতো আত্মহত্যার কেস!
বুঝে গেলুম – গোপী যে লেভেলের তাতে ওর বাবারও ক্ষমতা হবে না এ গানের মানে বোঝার।

আরে প্রেম একটা কত্ বড় কাজ, কি দহণ জ্বালা –
গোপীর একটাই জ্বালা, ধারের পয়সা আদায়ের জ্বালা, পাওনাদারে কাছে তলব করার জ্বালা;
একেবারে কোর্স ম্যাটেরিয়াল
কি আর করি –
নিজেই আপন মনে গাইতে লাগলাম –
“প্রাণের আশা ছেড়ে সঁপেছি প্রাণ।
যতই দেখি তারে ততই দহি,
আপন মনোজ্বালা নীরবে সহি,
তবু পারি নে দূরে যেতে, মরিতে আসি,
লই গো বুক পেতে অনল-বাণ।”
রবীন্দ্রনাথ ইজ রবীন্দ্রনাথ
কি বোধ, কি পারসেপশন, কনসেপশন, রিয়ালাইজেশন
সকলের মনে ঢুকে বসে আছে, ঈশ্বরের মতো
এ গানতো আমার জন্যই লেখা
প্রেমের একটা ব্যাপার লক্ষ্য করেছি;
শরীরটাকে করেদেয় জলের ট্যাংক
কথায় কথায় জল এসে যায় চোখে
লংকা চিবুলে নাকের জল
প্রেমে পড়লে চোখের জল
আর সংসারে ঢুকলে চোখের জল নাকের জল দুটোই।।।

Check Also

আঠারো বছর বয়স – সুকান্ত ভট্টাচার্য – কবিতা

আঠারো বছর বয়স – সুকান্ত ভট্টাচার্য আঠারো বছর বয়স কী দুঃসহ স্পর্ধায় নেয় মাথা তোলবার …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *